বিয়ের প্রস্তাবে নারাজি, চাকরি বঞ্চিত সেই হাসিবুল


 

ঘুস বা চাকরি দেখিয়ে বিয়ের ব্যবস্থার মাধ্যমে মেয়ের বাবার কাছে থেকে নেওয়া যৌতুকের টাকায় চাকরি দেওয়া হবে। মুক্তাগাছা উপজেলার হাজী কাশেম আলী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজের কম্পিউটার ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট পদে চাকরিপ্রত্যাশী মো. হাসিবুল ইসলাম আসিফকে এমন প্রস্তাব দেন সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর মামাতো ভাই ও কলেজের অধ্যক্ষ। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়াতে নিয়োগের তিন মাস পেরিয়ে গেলেও চাকরিতে যোগদান করতে পারেননি দরিদ্র ঘরের সন্তান মো. হাসিবুল ইসলাম আসিফ। 


তিনি উপজেলার তারাটি চরপাড়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে। এ বিষয়ে যুগান্তরে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে আরও ক্ষিপ্ত হয় কর্তৃপক্ষ। ফলে এখনো পর্যন্ত হাসিবুল ইসলাম আসিফকে চাকরিতে যোগ দিতে দেননি কলেজের অধ্যক্ষ।   


এমন পরিস্থিতিতে প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলেজ সভাপতি ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন হাসিবুল। 


হাসিবের পরিবার ও অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হাজী কাশেম আলী টেকনিকেল অ্যান্ড বিএম কলেজে গত বছরের জুলাই মাসে প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে বিজ্ঞান কম্পিউটার ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট পদে চাকরির জন্য আবেদন করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন এবং উত্তীর্ণও হন হাসিব। তবে নিয়োগ পরীক্ষা ৬ অক্টোবর নেওয়া হলেও পরীক্ষার খাতায় ৪ অক্টোবর লিখতে বলা হয়। পরবর্তীতে নিয়োগপত্র নিতে গেলে সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রীর মামাতো ভাই নজরুল ইসলাম চৌধুরী (বাবর রাবেয়া নগর আইটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ) তাকে (হাসিব) ফোন করে চর আধপাখিয়া নামক স্থানে ডেকে নিয়ে যায় এবং ১০ লাখ টাকা ঘুস দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা জানালে বিয়ের ব্যবস্থা করে যৌতুকের মাধ্যমে চাকরি দেওয়া বলে জানান তিনি। এখানেই শেষ নয়, পরে ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন আকন্দ হাসিবকে কলেজে দেখা করতে বলেন। সেখানে গেলে অধ্যক্ষ এবং সাচিবিকবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন কাজল তাকে অধ্যক্ষের কক্ষে নিয়ে গিয়ে একই প্রস্তাব দেন। তাতেও রাজি না হলে- তারা দুইজন মিলে হাসিবকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে বিষয়টি সাংবাদিকদের জানাতে নিষেধ করেন এবং হাসিবকে কলেজ থেকে বের করে দেন। এমতাবস্থায় চাকরিতে যোগদান করতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন হাসিবুল ও তার পরিবার। 


হাসিবুলের বড় ভাই আরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। ঘুসের ১০ লাখ টাকা কোথায় পাব? হতদরিদ্র হওয়াই কি আমাদের পাপ? কেন ঘুস ছাড়া চাকরি হবে না? এ বিচার কোথায়, কার কাছে দেব বলেন?


হাসিবুল ইসলাম আসিফ বলেন, একসঙ্গে পরীক্ষা দিয়ে ঘুসের মাধ্যমে বিজ্ঞান ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট পদে চাকরি হয়েছে একজনের। এছাড়া নৈশপ্রহরী ও আয়া পদে ঘুসের মাধ্যমে চাকরি হয়েছে এবং তারা চাকরিতে যোগও দিয়েছেন। আমি ঘুস দিতে পারিনি বলে এখনো চাকরিতে যোগ দিতে পারিনি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।


বিষয়টি জানতে জাকির হোসেন আকন্দ এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহাদাত হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তারা ফোন কল রিসিভ করেননি।


কলেজের সভাপতি সদ্য বদলি হওয়া সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোমানা রিয়াজ জানান, তার নিয়োগ বিষয়ে আগেই অধ্যক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।


ইউএনও মাহমুদা হাসান জানান, প্রতিদিন অনেক অভিযোগ জমা পড়ে এবং বিভিন্ন কর্মকর্তাকে তা তদন্তের দায়িত্বও দেওয়া হয়। বিষয়টি দেখে বলতে হবে। তবে যেকোনো বিষয়ে অভিযোগ পেলে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়, এখানেও তার ব্যত্যয় ঘটবে না।

Redirect Page

Welcome to My Website

LihatTutupKomentar